আমার জীবনের গল্প
আমার নাম হচ্ছে মিস শম্পা আক্তার । আমি এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান । আমার গ্রাম জগদল। থানা রাণীসংকেল। জেলা ঠাকুরগাঁও। আমরা তিন ভাইবোন তার মধ্যে আমি বড় । পরিবারের বড় সন্তানদের একটু বেশি দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে।
সূচিপত্র
আমি যেহেতু আমার পরিবারের বড় মেয়ে তাই সবার খুব আদরের। আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তার নাম হলো জগদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এর থেকে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পাস করার পর ইন্টারে ভর্তি হয় কাউন্সিল ডিকে কলেজে। কলেজ পাশ করার পর ভর্তি হয় রানিসংকেল ডিগ্রী কলেজে এ অনার্স বিভাগে ইসলামের ইতিহাস সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স কমপ্লিট করি। অনার্স ফাইনাল ইয়ার এর এক্সাম হওয়ার মাঝে আমার বিয়ে হয়ে যায় আর বিয়ের পর আমি বাকি এক্সাম গুলো দেই । মাস্টার্স করার জন্য আমি ভর্তি হই বগুড়া আজিজুল হক কলেজে কিন্তু মাস্টার্স কমপ্লিট করার সুযোগ হয়নি । এটার মূল কারণ হচ্ছে আমার অবহেলা।
বিবাহিত জীবন
প্রতিটা মেয়ের জীবনে বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে আমারও ছিল আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার সবস্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার শ্বশুর বাড়ি বরণচা। আমার বাবার বাসা থেকে প্রায় ৩০ মিনিটের রাস্তা। আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই খুব ভালো। আমার স্বামী হচ্ছে পরিবারের বড় ছেলে। সে একটা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে কম্পিউটার অপারেটরে । তার কোম্পানির নাম হলো এলকো ফরমাল লিমিটেড। আমার স্বামী যেহেতু বাইরে কোম্পানি চাকরি করে সেই সুবাদে আমিও বাইরে থাকা শুরু করি তার সাথে। বিয়ের পর যখন পরিবার ছেড়ে স্বামীর সাথে বাইরে আসলাম তখন মনে হল সত্যিই জীবনটা কত রঙিন । জীবনটা এমনি এমনি রঙিন হয় না একটা মেয়ে মানুষের তার সামনে ডানে বামে ডাল ডাল হয়ে আছে যে স্বামী তাই। বাইরে থাকা সুবাদে বিয়ের পরে আমরা খুবই ঘুরতাম । মন যা চায় তো তাই করতাম পরিবারের কোন বাধা ছাড়াই। একেক সময় মনের ইচ্ছা গুলো পূরণ হচ্ছে দেখে চোখে নিজের অজান্তে জল চলে আসতো । সত্যি একটা মেয়ে মানুষের জীবন সার্থক বা পরিপূর্ণ হয় যদি স্বামী নামের মানুষটা তাকে বোঝে ।
কোথায় আছে তখনই একটা মেয়ে মানুষের জীবন তখনই সার্থক হয় যখন সে মা হয় । আল্লাহর অশেষ রহমতে বিয়ের তিন বছরের মাথায় আমি সন্তানের মা হয়। মা হওয়ার অনুভূতিটা সত্যি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় । আমার মেয়ের ২১ দিনের মাথায় আকিকা করে তার নাম রাখা হয় ওয়াজিহা হাফসা বিনতে ওমর । সবাই বলে মেয়ে নাকি তার বাবার মত হয়েছে সত্যিই তাই । আগের মানুষেরা বলতো যে মেয়ে বিয়ের আগে নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় সন্তান হওয়ার পর তার চোখে আর ঘুম আসে না কথাটা কিন্তু সত্যি। একটা মেয়ের জীবনে মা হওয়াটা এক নতুনত্ব যেখান থেকে প্রতিটা মুহূর্তে মুহূর্ত যেমন আনন্দের তেমনি সেখানেও ধাপে ধাপে একটা শিক্ষা শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না। প্রাপ্ত বয়স্ক একটা মেয়ের কাছে এ বিষয়গুলো একটু সহজ কিন্তু যাদের অপ্রাপ্তবয়স্ককে বিয়ে হয় ও প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হয় তাদের জন্য এটা কষ্টের আমার কাছে তো তাই মনে হয়। এখন আমার মেয়ের বয়স আড়াই বছর সে নিজে নিজে হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে, ভালো মন্দ বোঝে ,কিছু কিছু জিনিস তো পড়তেও পারে ,তার এখন ঘুমানোর দোয়া মুখস্ত, শরীরের প্রায় প্রতিটা অঙ্গের ইংরেজি বাংলা মানে বলতে পারে, আমার মেয়ে বরাবরই বাবা ভক্ত আর তার মা মানে আমি বিরোধী দল। তার কাছে মেয়ে নিয়ে আমাদের পরিবারটা আনন্দে মুখরিত তার একটা হাসি আমাদের জীবনের সব ক্লান্ত দূর করে দেয় । আর তার কষ্টের ঠিক সে রকমই আমাদের কষ্ট আর টেনশন হয়। ভালো থাকুক পৃথিবীর সব সন্তান প্রতিটা মা-বাবার কোলে।
আমি ছোট থেকেই একজন শিক্ষিকা হতে চেয়েছিলাম । চাইলেই কি আর সবই হয়। আমি মোটামুটি যেটা দিয়ে চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা তো নেই বরং অসম্ভব । তবে আমার জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা না আমি ভাবি তার চাইতে আমার স্বামী বেশি ভাবে । সে সব সময় আমাকে উৎসাহ দিতে থাকে তোমার দ্বারা হবে তুমি কিছু একটা করো। আমারও কিছু করতে মন চায় কি করব ভেবে পাইনা । আবার মনের ভাবনাতেও অনেক পরিকল্পনা আসে যেটা ভাবনাতে সম্ভব । যাই হোক সবশেষ ঠিক করলাম একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হব। মোবাইলে ভালো ভালো এড দেখে ভর্তি হলাম অর্ডিনারি আইডিতে। এখন ক্লাস ও করতেছি কখন সফল হব আল্লাহ জানে। দেখে সবকিছু যত সহজ মনে হয় বাস্তবে কিন্তু তার চাইতেও কঠিন। যেহেতু, আমার একটা ছোট মেয়ে আছে আর একহাতে তাকে বড় করতে হয়, দেখাশোনা করতে হয় তাই আমার পক্ষে তো আরো কঠিন। যাই হোক লেগে থাকবো ইনশাল্লাহ ।
আমি আমার গোটা জীবনে জীবন থেকে এই বুঝলাম যে মানুষের পরিবর্তন হয় ধাপে, ধাপে যেটা হতে বাধ্য আর সময়ের সাথে, সাথে যদি সবকিছু মেনে নিতে পারো তাহলে তুমি সুখী আর যদি না পারো তাহলে তুমি বড়ই অসহায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url